আজ ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বেশিভাগ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা লোনের টাকায় কেনা দূর্ভোগে হাজার হাজার পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদন

হঠাৎ-ই বিগত ২০ই জুন/২১ইং রোজঃ রবিবার এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান যে বেটারী চালিত সকল যান বাহন নিষিদ্ধ করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ এই অটোরিকশা গুলো অবাধে পরিচালনা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, নানান ভাবে এই রাজনৈতিক মোড়লগণ তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাস্তায় রাস্তায়, মোরে মোরে চাঁদাবাজি করে আসছে।।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আশ্বাস দিয়ে বলেন, এখন থেকে নির্দিষ্ট স্থানে, টল তোলার নির্ধারিত স্থানে, নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ড এবং টার্মিনাল ছাড়া কেউ যত্রতত্র এলো পাথারী চাঁদাবাজি করতে পারবে না।
সেই সাথে তিনি আরও বলেন, যারা এই নির্ধারিত স্থান গুলোতে চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত থাকবে তাদের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকাি থাকতে হবে, এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সেই নিষিদ্ধ করণ কর্মসূচি কার্যকর করা হবে পরের দিন সোমবার থেকেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মেনেই শুরু হয় বেটারী চালিত অটোরিকশা বন্ধ কার্যক্রম।

অনেক চালক মতামত দেন যে এতে করে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে, সাধারণ অটোরিকশার চালকগণ। যারা সাধারণ দিন মুজুরের ন্যায় অটোরিকশার মাধ্যমে রোজগার করে, দিন আনে দিন খায়, তাদের মধ্যে পড়েছে খুবই উদ্বিগ্নতার ছাপ।
তারা জানে না, তারা এখন কি কাজ করবে, কি করে তাদের সংসারের খরচ বহন করবে।
কে অথবা কি করে ধরবেন তাদের সংসারের হাল?
এই অটোরিকশা চালকের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এনজিও থেকে লোন নিয়ে এই অটোরিকশা গুলো ক্রয় করেছে। তারা এখন জানেনা, কি করে তারা লোনের টাকা পরিশোধ করবে।
অনেকেই একটি প্রশ্ন করেছেন, যদি সব কিছু ডিজিটাল হয়, তাহলে প্যাডেল রিকশা ডিজিটাল হয়ে অটোরিকশা হলে সমস্যা কোথায়?

একজন সাধারণ যুবক বলেন, যারা বলেন অটোরিকশা অবৈধ, তাদের উদ্দেশ্য সে যুবক প্রশ্ন করেন, অটোরিকশার নিবন্ধন নাই বলে কি এটা অবৈধ হলো। এটা তো আর বিদেশি কোন পরিবহন নয়, অথবা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমেও এদেশে আনা হয়নি, তাহলে অবৈধ হবে কেন?

তিনি আরও বলেন, সবাই বলে, নিবন্ধন নেই বলেই নাকি এই সব অটোরিকশার মাধ্যমে এক্সিডেন্ট ঘটছে? তাহলে কি? যে সব গাড়ি নিবন্ধিত, তারা কখনও এক্সিডেন্ট করে না? অটোরিকশা একটি ছোট গাড়ি, আমরা এক্সিডেন্ট করলে, হয়তো সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়, আর নিবন্ধিত ঐ সব বড় গাড়িগুলো এক্সিডেন্ট করলে, এক এক্সিডেন্টেই কত মানুষ মারা যায়, কত মানুষ আহত হয়, কত মানুষ তার জীবনের সহায়সম্বল হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, যদি নিবন্ধন না থাকার কারনে আমরা এক্সিডেন্ট করে থাকি, তাহলে আমাদের অটোরিকশা নিবন্ধন করার ব্যবস্থা গ্রহন করেন। কিন্তু আমাদের কর্ম আমাদের চলার ও বাঁচার সম্বল কেড়ে নিবেন না।
আমার দাবী, সরকার যেন প্রয়োজনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে হলেও, আমাদের বৈধতা দেন।

সাজ্জাদ (২৮) নামের এক ইজিবাইক চালক বলেন, করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, মানুষের কর্ম বন্ধ, অনেকেরই চাকুরী চলে গেছে এই করোনার করাল থাবায়।
অনেকে আগে গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করত, অনেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, আবার অনেকেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন কল কারখানা ও নির্মাণ সাইটে।
কিন্তু করোনার অজুহাতে অনেকের চাকুরী চলে গেছে, অনেকেই নিজেই চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে, আবার কিছু কোম্পানি সরাসরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে
তারা আজ করোনার কারনে কর্মহীন। তাই কর্মের খোঁজে অনেকেই বেঁচে নিয়েছে অটোরিকশা, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, সিএনজি, পাগলু, ইত্যাদি, খুঁজে নিয়েছে স্বাধীন কর্ম। সেই সাথে খুঁজে পেয়েছিল সংসার চালানোর হাতিয়ার।

সে আরও বলেন, তবে কেন আজ কেড়ে নেয়া হচ্ছে সেই কর্ম। কেন তাদের করা হচ্ছে আবার বেকার এবং সংসারের বোঝা। কি করবে এখন তারা, কি করে চলবে তাদের ঘর ও সংসার, কি করে পরিশোধ করবে তাদের ঋণের টাকা? এত প্রশ্নই বা করবে কার কাছে?

একজন সম্মানিত ভদ্রলোক (৫৫) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমনিতেই বেকার সমস্যা কারনেই দারিদ্র্যতা কাটে নি আজও। এত বেকার মানুষের মাঝে আরও বেকার মানুষের পাল্লা এবার হয়তো আরও ভারী হতে চলেছে।।

তিনি আরও বলেন, কর্মহীন মানুষ গুলো কর্মের অভাবে, ক্ষুধার তারণায়, সংসারের তাগিদে, জীবনের তাগিদে না জানি কবে অপরাধ কর্মে যুক্ত হয়ে যায়?
তাহলে হয়তো দেশে ছিঁচকে চুরি, ছিনতাই, লুটপাট, চাঁদাবাজি, আরও বেড়ে যেতে পারে।
মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলো অপূর্ণ থেকে গেলে, তখন সে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তার মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণের চেষ্টা করবে, এটাই সাভাবিক।
তাহলে আমাদের করনীয় কি?
এই মুহুর্তে হয়তো, তাদের জন্য কোন একটি কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে হবে, অথবা পূর্বের কর্ম বহাল রাখতে হবে, অথবা তাদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণের সুব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষ করে তাদের খাদ্যের সমস্যার সমাধান করে দিতে হবে অনতি বিলম্বে নতুবা এই রকম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ সাধারণ জনগণ ভোগান্তির স্বীকার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর