নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার সল্টগোলা লং ভেহিকেল গেটে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন টেইলর শ্রমিক নেতা হাসান মাহামুদ। যেখানে সিএমপি কমিশনারের জারি করা ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে-সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে রাস্তার ওপর দুইটি টেইলর গাড়ি আড়াআড়ি করে রেখে উভয়মুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে হঠাৎ সড়ক অবরোধ সৃষ্টি হলে বন্দরের হাজারো যাত্রী, শ্রমিক, নারী–শিশু, পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিক নেতা হাসান মাহামুদের কাছে ব্যারিকেডের কারণ জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন-‘আমাদের শ্রমিককে বিএনপির কিছু নেতা আহত করেছে’। পরবর্তীতে তদন্তে নিশ্চিত হয় – এটি ভিত্তিহীন, গুজব ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য।উচ্ছেদ অভিযানের পর দখলদারি নিয়ে দুই গ্রুপের বিরোধ-শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ অসত্যসিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাস্টমস–ইপিজেড সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর দুটি গ্রুপ পুনরায় দখল নিতে চাইলে সেখানেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ জটিল পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ‘শ্রমিককে পেটানো হয়েছে’- এই মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিক নেতা হাসান মাহামুদ।SCOP ঘোষিত অবরোধও বন্ধ—নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে ছুটলেন কেবল হাসান মাহামুদ এর আগে বন্দর–সংশ্লিষ্ট সংগঠন SCOP (স্কপ) সল্টগোলা ও সিমেন্স হোস্টেল এলাকায় বন্দর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও, সিএমপি কমিশনারের ১২ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সকল সমাবেশ, মিছিল, অবরোধ নিষিদ্ধ ঘোষণার কারণে তারা কর্মসূচি পালন থেকে সরে দাঁড়ায়। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কার ইশারায়?—এমন প্রশ্ন তুলে স্থানীয়রা বলছেন—হাসান মাহামুদ বারবার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন্দর এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।এলাকাবাসী জানান-SCOP-ও আইন মানে; রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মসূচি স্থগিত করে;কিন্তু একমাত্র এই শ্রমিক নেতা নিয়মিত উসকানিমূলক আচরণে বন্দরকে অচল করতে চেষ্টায় লিপ্ত।ওসি বন্দর ও ইপিজেড দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিক নেতা হাসান মাহামুদ, সেক্রেটারি খায়ের, রাসেলসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে আলোচনা করেন। সবার আগে তিনি ব্যারিকেড সরিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। আলোচনার সময়ই পরিষ্কার হয়-এটি ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অস্থিতিশীল করার একটি প্রচেষ্টা।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে-১২ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বন্দর এলাকায়, সকল প্রকার সভা–সমাবেশ, মিছিল, মিটিং,ব্যারিকেড, শোডাউন, এবং যে কোনো ধরনের জনসমাগম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই অবস্থায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করা আইনের সরাসরি লঙ্ঘন, যা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা–চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।এলাকাবাসীর ক্ষোভ-হাজারো মানুষকে জিম্মি করে রাখার অধিকার কারও নেই, ব্যারিকেডের কারণে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়, যার প্রভাবে বন্দর কার্যক্রমে উৎপাদনশীল সময় নষ্ট হয়। ব্যবসায়ী, চালক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-একজন শ্রমিক নেতার কারণে পুরো এলাকা অচল হয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা কোথায় থাকে?কারও নির্দেশে অস্থিরতা? তদন্ত দাবি-স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন-হাসান মাহামুদ নিয়মিতভাবেই অতি উৎসাহী আচরণে উসকানিমূলক কাজ করেন। তার পেছনে কোনও গোষ্ঠী বা স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের ইন্ধন আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তারা।বন্দর এলাকার মানুষ বলেন-SCOP-ও নিষেধাজ্ঞা মানে। অন্য সব সংগঠন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর একজন শ্রমিক নেতা বারবার আইন ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, সিভিল সোসাইটি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একসুরে জানান-হাসান মাহামুদকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।চট্টগ্রাম বন্দর-নির্ভর অর্থনীতি প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার কার্যক্রম বহন করে। এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আইন অমান্য করে ব্যারিকেড, গুজব ছড়ানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা-কেবল দায়িত্বহীনতাই নয়, এটি একটি রাষ্ট্রবিরোধী দুঃসাহস স্থানীয় জনগণ ও সংগঠনগুলোর সার্বিক মত-এই ধরনের কর্মকাণ্ড আর বরদাস্ত করা যাবে না।আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণই এখন সময়ের দাবি।
Leave a Reply